বন্ধুদের নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই। এই যেমন সুরবেক। Surbek Biswas সুরবেক বিশ্বাস। যাদবপুর বিদ্যাপীঠে একসঙ্গে পড়তুম। সেকশন আলাদা হলেও আলগা ভাব ছিলই। পরে গুছিয়ে আর্টস পড়বে বলে পাঠভবনে চলে যায়। তারপর প্রেসি ঘুরে যাদবপুরে ফিরে আসে। মধ্যিখানে অনেক কমন ফ্রেন্ড জুটে যায় আমাদের। ফলে দোস্তালিতে মরচে পড়ে না। পুণ্যশ্লোক পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সুরবেক একদিন স্পোর্টস জার্নালিস্ট হবে এমনটাই ঠিক ছিল। গৌতম ভট্টাচার্যকে গুরু মানত। নবাগত শিশির ঘোষকে নিয়ে ফিচার লিখতে গিয়ে গৌতম একবার হেডিং করেছিলেন, 'সকালে শিশির'। সুরবেক আমাদের জনে জনে বলে বেরিয়েছিল - দেখ! এই না হলে হেডিং!
তারপর সুরবেক কী না হয়েছে! তিন তিনটে বড়ো মিডিয়া হাউসে কাজ করেছে। তেত্রিশ রকমের দায়িত্ব সামলেছে। এবং সামলাচ্ছে।
এরই মধ্যে ফুড কলামনিস্ট হিসেবে নাম কিনেছে। যেমন রসিক লোক সুরবেক, তেমনই রসসিক্ত ওর লেখা। পার্সোনাল হিস্ট্রির সঙ্গে কালচারাল হিস্ট্রির মিশেল দিয়ে এমন একটা স্টাইল তৈরি করেছে যেটা বাংলায় ছিল না। প্রতাপকুমার রায় বা শংকরকে মাথায় রেখেই বলছি, এই বৈঠকি মেজাজ ওদের লেখায় নেই। সুরবেকের কাছে পথিকৃৎ বীর সংভির ফুড কলামে দেখনদারি আছে, যা নেই তা হল সুঘ্রাণ। এবং স্পর্ধা। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি যা যা নিয়ে আদিখ্যেতা করে সেগুলোকে খুঁচিয়ে দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়ে সুরবেক যে মজা পায় সেটা প্রথম টের পেয়েছিলাম ৩১ বছর আগে, ৫ নং বাসে গড়িয়া থেকে বাঘাযতীন আসতে গিয়ে। সত্যজিতের ' আগন্তুক' যে ছবি হিসেবে কত খারাপ তা নিয়ে এমন তক্কো জুড়েছিল যে আরেকটু হলে হাতাহাতি হয়ে যেত!
সেই সুরবেক পাল্টায়নি। তাছাড়া 'মিল' নিয়ে আমাদের দুচারটে মিল বেরিয়ে গেছে। স্রেফ ইংলিশ ব্রেকফাস্টের লোভে দার্জিলিং যেতে পারি (এবং চার পাঁচদিনের জন্যে ভাত আর মাছের ঝোলকে ভুলে যেতে পারি!) আমরা।
ওর সপাট লেখায় খাবারের খাস খবর তো আছেই, আছে খোশ মেজাজ। যেমন ধরুন, কালিকার তেলেভাজাকে পাশ মার্ক দিলেও যে ভঙ্গিতে লক্ষ্মীনারায়ণ সাউয়ের তেলেভাজার তুলো ধুনেছে (স্যাম্পল - সয়াবিন চপ জাতের খাবারকে ফুড পর্ন বলে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া) যে পড়তে গিয়ে চোখ কপালে উঠেছে!
এহ বাহ্য! মান্দাস থেকে বেরোনো 'শ্রী ভোজনেষু: রসেবশে রসনায়' পড়তে গিয়ে থেকে থেকেই জিভ সুরসুর করছে। মনে হচ্ছে, এ জীবন লইয়া কী করিলাম! কলকাতা জুড়ে খানদানি খাবারের এত এত ঠেক, এত এত ঠাট - এমন হদিশ আগে পাইনি কেন? তাছাড়া শুধু তো কলকাতা নয়, সারা বাংলার খাবারের সুরতহাল মিলছে বইটায়। সুরবেকের এইসব লেখার প্রসাদগুণ ওর রসবোধ। কুমারপ্রসাদ মুখার্জির 'দিশি গান বিলিতি খেলা' আন্দাজের মৌতাত। একেকটা লেখা যত এগোচ্ছে তত রং খোলতাই হচ্ছে। যেন মহম্মদ রফি সাব 'মধুবন মে রাধিকা নাচে রে' গাইছেন! গান এগোচ্ছে, আর রাগ হাম্বির তার বাহার মেলে ধরছে। এত আইডিয়া! এত ইম্প্রভাইজেশন! মন দুলছে, প্রাণ নাচছে। শেষটায় চাকুম চুকুম খেয়ে ঘুম লাগাতে ইচ্ছে করছে।
শুধু একটাই আপসোস সুরবেক। মোগলাই খাবারের কথা লিখতে বসে তুই সেই কবেকার এক জুন মাসে আমার স্কুল লাইফের গার্লফ্রেন্ডের বাড়িতে বসে মোগলাই পরোটা আর মাংসের ঘুগনি খাওয়ার কিসসা শুনিয়েছিস। কাকিমার ওই রান্নাটা আমার মুখে লেগে আছে আজও। কিন্তু সেই পার্টিকুলার মোগলাই সন্ধেটা কী করে মিস করে গেলাম সেটাই গালে হাত দিয়ে ভেবে চলেছি!
Khub valo boi. Oshadharon lekha.