রেকর্ডিং বা প্রোগ্রামের সময়ে গীতশ্রীর টোটকা চিকেন স্যুপ
কে বা কারা যেন বলেন, গায়ক-গায়িকারা দূরে থাকেন ঠান্ডা সমস্ত রকম খাবার থেকে? পাছে গলা বসে যায়, গলা ধরা যায়, গলা ভেঙে যায়, সেই ভয়ে! তা হলে জেনে রাখুন, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রিয়তম খাদ্যবস্তুর নাম ছিল আইসক্রিম। কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পীর কাছে আমৃত্যু ওই ঠান্ডা জিনিসই ছিল খাবার-দাবারের মধ্যে সব চেয়ে হট ফেভারিট। বাঙালি গৃহস্থ বাড়িতে অতিথি হিসেবে গেলে মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজটায় এখনও পুরোপুরি ইতি পড়েনি। তবে খুব ঘনিষ্ঠরা জানতেন, কী খাবার নিয়ে গেলে গীতশ্রী খুশি হবেন। তাই, তাঁরা নিয়ে যেতেন আইসক্রিম। আর আইসক্রিম হাতে পেলেই শিশুর মতো উৎফুল্ল হয়ে উঠতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
তার মানে, ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’-তে ধনুর নু-তে অলঙ্কারের যে অবিশ্বাস্য ও অননুকরণীয় প্রয়োগ, তাতে কিন্তু আইসক্রিম কোনও বাধার সৃষ্টি করেনি। অর্থাৎ, গান গাইলে আইসক্রিম, দইয়ের মতো ঠান্ডা খাবার খাওয়া বারণ, এই সব কথাবার্তা যে ভুলভাল ও নিছকই মিথ, তার সব চেয়ে বড় প্রমাণ গীতশ্রী নিজেই। এমনিতে আইসক্রিমের ফ্লেভার নিয়ে তাঁর কোনও বাছ-বিচার ছিল না। তবে বেশির ভাগ সময়ে ভ্যানিলা ও স্ট্রবেরি ফ্লেভারের টু-ইন-ওয়ান এবং বাটার স্কচ আইসক্রিমই খেতেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁর কাছে ব্যাপারটা এমন ছিল যে, আইসক্রিম পেলেই হলো।
তা বলে কি চিরশ্রেষ্ঠ গায়িকা স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন না? মোটেই নয়। প্রতিভা যদি নিজের প্রতি যত্নবান ও শৃঙ্খলাপরায়ণ না-হয়, তা হলে তার একটা পর্যায়ের পর এগনো কিন্তু মুশকিল। গীতশ্রী কতটা স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন, সেটা বোঝা যায়, তাঁর একটা টোটকা থেকে। নিজে তো সেটা ব্যবহার করতেনই, ঘনিষ্ঠ স্নেহভাজন শিল্পীদের জন্যও সেই টোটকা নেওয়ার পরামর্শ দিতেন তিনি।
গীতশ্রীর বিশেষ স্নেহধন্যাদের এক জন হলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী মধুরিমা দত্ত চৌধুরী। মধুরিমার দাদু, মানে মায়ের বাবা অনুপম ঘটকই ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’র সুরকার। যে গান আবার সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক রকম সমার্থক। মধুরিমার বাবা অরুণ দত্তও স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী। গত শতাব্দীর আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে কিংবদন্তি গীতিকার শ্যামল গুপ্ত ও গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাতায়াত শুরু মধুরিমার। তিনি শ্যামল গুপ্তকে ডাকতেন জ্যেঠু এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে জ্যেঠিমা। মধুরিমাকে কন্যাসম স্নেহ করতেন সন্ধ্যা।
মধুরিমা বলছেন, ‘অনুষ্ঠান বা রেকর্ডিংয়ের আগে আমাদের সব সময়ে সচেতন থাকতে হয় খাবার-দাবারের ব্যাপারে। কারণ, যাতে কোনও ভাবে অ্যাসিডিটি না-হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হয়। কোন খাবার থেকে অ্যাসিডিটি হয়ে যাবে, আগেভাগে বুঝতে পারব না, সেই ভয়ে আমি প্রায় কিছুই খেতাম না। বড়জোর একটা শুকনো টোস্ট। কিন্তু জ্যেঠিমা এটা শুনে আমাকে মৃদু বকুনি দিয়েছিলেন।’ মধুরিমার কথায়, ‘জ্যেঠিমার বক্তব্য ছিল, বেশ কিছুক্ষণের অনুষ্ঠান, তার চেয়েও বড় কথা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেকর্ডিংয়ের জন্য শরীরে বল থাকা দরকার। না-হলে গানে নিজের পুরোটা ঢেলে দেওয়া যাবে না। জ্যেঠিমা বলেছিলেন, ‘গরম গরম চিকেন স্যুপ ফ্লাস্কে করে নিয়ে যাবি। তাতে মুরগির টুকরো, আনাজ কিছুই থাকবে না। কেবল ঝোল আর সব টুকুর নির্যাস। ওতে সামান্য নুন-গোলমরিচ দিবি। একটা কাপে ঢেলে ওটা হালকা হালকা সিপ করবি। তার পর প্রোগ্রাম করতে উঠবি। এই জিনিসটা খুব এনার্জি দেয়। স্ট্রেংথ পাবি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেকর্ডিং থাকলে মাঝখানেও কয়েক বার খাবি। দেখিস, শরীরে কোনও অসুবিধেও হবে না।’ মধুরিমার সংযোজন, ‘জ্যেঠিমা নিজে ঠিক ওটাই করতেন। উনি বলার পর আমিও করে দেখেছি, এটা খুব কাজে দেয়।’
গরম একটা জিনিস আবার ডেজ়ার্টের মধ্যে পছন্দ করতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গরম রসগোল্লা। লেক গার্ডেন্স তল্লাটের লর্ডস-এর মোড়ের ‘নিউ কল্পনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ থেকে মধুরিমা বেশ কয়েক বার তাঁর জ্যেঠিমার জন্য গরম রসগোল্লা, গরম রাজভোগ নিয়ে গিয়েছেন। সে সব খুব তৃপ্তি করে খেতেন গীতশ্রী। ফলের মধ্যে তিনি খেতে ভালোবাসতেন সব ধরনের আম আর মিষ্টি মুসাম্বি লেবু।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের আসক্তি ছিল একটাই পানীয়ের প্রতি। আসক্তি মানে সেই পানীয়ের ব্যাপারে বড্ড দুর্বলতা ছিল তাঁর। দুধ ছাড়া চা। বেশির ভাগ সময়ে চিনি ছাড়াই লিকার চা, কখনও কখনও সামান্য চিনি দিয়ে। বাড়িতে কেনা হতো খুব উঁচু মানের, খুব ভালো ফ্লেভারের দার্জিলিং চা। বেশ দামি পাতা-চা কেনা হতো। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে তাঁর নিজের ঘরে খাট লাগোয়া ছিল একটা ছোট্ট মাল্টি-পারপাস টেবল। তাতে থাকত চায়ের কৌটো, কয়েকটা কৌটোয় রকমারি বিস্কুট ও কুচো নিমকি জাতীয় হালকা নোনতা খাবার। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের খুব কাছের এক জন তাঁকে একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের গার্লিক টোস্ট এনে দিয়েছিলেন। তার পর থেকে ওই গার্লিক টোস্ট-ই হয়ে উঠল তাঁর চায়ের সঙ্গে টা। এমনিতে বিস্কুটের মধ্যে তিনি বেশি খেতেন মারি বিস্কুট। শিল্পী মধুরিমা দত্ত চৌধুরী একবার তাঁর জ্যেঠিমার জন্য লেক গার্ডেন্সের সেই নিউ কল্পনা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকেই নিয়ে গিয়েছিলেন মেথি দেওয়া নিমকি। মধুরিমার কথায়, ‘জ্যেঠিমা সেই প্রথম মেথি-নিমকি খেলেন। আর খেয়েই ভীষণ খুশি, আমাকে বললেন, ‘ঝুম (মধুরিমার ডাকনাম), এটা তো দারুণ আর একবার আনিস তো!’
গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের খাবারের পছন্দ একেবারেই উচ্চকিত বা লাউড ছিল না। সেটা ছিল সূক্ষ্ম রুচির এবং ছিমছাম, পরিপাটি একটা ব্যাপার। আর কোয়ালিটি বা গুণমানের ক্ষেত্রে সেখানে মোটেও আপসের প্রশ্ন ছিল না। ব্যাপারটা অনেকটা তাঁর ‘ও পাখি আজ তুই যাসনে চলে’ গানে ‘একটু সোহাগ করে যা’-র অংশটা গাওয়ার সময়ে ‘সোহাগ’ উচ্চারণের মধ্যে অনন্য অভিব্যক্তিতে যেমন সত্যি সত্যিই সোহাগের ভাব জীবন্ত হয়ে ওঠে, তেমন। বেসনে ডুবিয়ে পনির পকোড়া তো মামুলি ব্যাপার। কিন্তু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সেই পনিরের পকোড়াকেই অন্য মাত্রা দিতেন। পনির আগে ডুমো ডুমো টুকরো করে কেটে নিতেন, তার পর নুন-জোয়ান মেশানো বেসনের ব্যাটারে ভাজতেন। তবে সেখানেই গল্পটা যে শেষ হচ্ছে না! টক দই-শসা-বিট নুন দিয়ে একটা রায়তা তৈরি করে সেই রায়তার সঙ্গে পনিরের ওই পকোড়া অন্যকে পরিবেশন করতেন, নিজেও খেতেন তিনি। পনির পকোড়া সেই রায়তায় ডুবিয়ে যাঁরা খেয়েছেন, তাঁরা আজও তার স্বাদ ভুলতে পারেন না। গীতশ্রী জন্মাষ্টমী পুজো করতেন ঘটা করে। ভোগে বেশি আইটেম হতো না। পোলাও, ভেজিটেবল চপ, ছানার ডালনা, চাটনি, ও পায়েস। প্রত্যেকটা পদ-ই গুণমানের বিচারে সর্বোত্তম।
গীতশ্রীর স্বামী, গীতিকার শ্যামল গুপ্ত তাঁর স্ত্রীর রাঁধা ছানার ডালনা, ধোকার ডালনা খেতে খুব পছন্দ করতেন। তবে শ্যামল গুপ্তর সব চেয়ে প্রিয় ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের রান্না করা পাঁঠা বা খাসির মাংস। কখনও মাংসের পাতলা ঝোল, কখনও কষা— ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রান্না করতেন সন্ধ্যা। তাঁর রান্না যাঁরা খেয়েছেন, তাঁরা বলেন, বিস্কুটের গুঁড়ো বা ব্রেড ক্রাম্ব মাখিয়ে ফিশ ফ্রাই এবং ফিশ ব্যাটার ফ্রাই— দু’টোই অবিশ্বাস্য রকম ভালো হতো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের হাতে। ছোট মাছের মধ্যে সন্ধ্যা নিজে খেতে ভালোবাসতেন মৌরলা, ছোট ট্যাংরা মাছের ঝাল কিংবা চচ্চড়ি। কখনও কখনও খুব সাধারণ জিনিস দিয়ে অসাধারণ রান্না করেও তিনি তাক লাগিয়ে দিতেন। কিংবদন্তি গায়িকার সর্বক্ষণের সঙ্গী হিসেবে বহু বছর তাঁর কাছে ছিলেন প্রণতা গিরি। যাঁর ডাকনাম টুসি। যাঁকে নাতনির মতো স্নেহ করতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আদরের সেই টুসিকে তিনি অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন। যেমন, মোচার ঘণ্ট যদি একবেলা সবার খাওয়ার পর কিছুটা বেঁচে যায়, তা হলে সেটা পরে ওই ভাবে না-খেয়ে ঘণ্টটাকে পুর হিসেবে ব্যবহার করে তার সঙ্গে আলু চটকে বেসনের গোলায় ডুবিয়ে ভেজে চপ বানিয়ে খাওয়া। নিজের হাতে টুসিকে ওই মোচার চপ বানানো শিখিয়েছিলেন গীতশ্রী। পরে প্রণতা ওরফে টুসির বানানো সেই চপের তারিফ সন্ধ্যা নিজে করেছেন। বাড়িতে আপনজন কেউ এসেছেন, তাঁকে আপ্যায়ন করে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘কী খাবি, কী খাবি?’ তার পর খানিক ভেবে বলেছেন, ‘টুসি আজ একটা অদ্ভুত মোচার চপ তৈরি করেছে। চায়ের সঙ্গে ওটা খেয়ে দেখ। ভালো লাগবে।’ মিনিট কয়েকের মধ্যে টুসি গরমাগরম মোচার চপ প্লেটে সাজিয়ে হাজির হতেন অতিথির সামনে।
নিজে খেতে ও অন্যকে খাওয়াতে ভালোবাসতেন, তাঁর এমন তিন-চারটি সিগনেচার ডিশও গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শিখিয়ে গিয়েছিলেন প্রণতাকে। তার মধ্যে একটি ছিল ভেটকি মাছের স্টু। সম্ভবত এটি পার্সি রান্না। প্রেশার কুকারে ওই রান্না হবে, তবে কুকারের সিটি-টাকে খুলে রাখতে হবে, শুধু ঢাকনাটা দিতে হবে। রান্নাটা হবে দমে। তিনটে লেয়ার বা স্তরে কুকারের মধ্যে সাজাতে হবে ভেটকি মাছ এবং আনাজপাতি-সহ অন্যান্য উপকরণ। প্রথমে এক টুকরো ভেটকি, তার উপর একটা পেঁয়াজের চাকা, তার উপর একটা টোম্যাটোর চাকা এবং তারও উপর উপর অল্প মাখন। আবার সেই মাখনের উপর আর এক টুকরো ভেটকি মাছ, তার উপর একটা পেঁয়াজের চাকা, এ বার তার উপর একটা ক্যাপসিকামের চাকা এবং তার উপর অল্প মাখন। আবারও তার উপর ভেটকির টুকরো, পেঁয়াজের চাকা, টোম্যাটোর চাকা এবং তার উপর এ বার বেশি করে মাখন। অনেকটা দুধ দিতে হবে আর নামমাত্র জল, পরিমাণ মতো নুন। হলুদ পড়বে না। দমে রান্নাটা হওয়ার পর নামিয়ে গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন।
সম্ভবত নিজের গুরু, উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ ও তাঁর পরিবারের প্রভাবও পড়েছিল গীতশ্রীর রান্নায়। সেটা আন্দাজ করা যায় তাঁর নিজের রাঁধা ও পরে প্রণতাকে শেখানো কুমড়োর নোনতা হালুয়া পদটি থেকে। কুমড়ো একেবারে ঝিরি ঝিরি করে কাটতে হবে। কড়াইয়ে অনেকটা ঘি, শুকনো লঙ্কা আর প্রচুর পরিমাণে রসুন দেওয়ার পর ঝিরি ঝিরি করে কাটা কুমড়ো তাতে দিয়ে ঢিমে আঁচে অনেকটা সময় ধরে নাড়তে হবে। পরে নুন দিতে হবে। চিনি দিলে নামমাত্র, না-দিলেই ভালো। একই রেসিপিতে তৈরি হবে মেথিশাক। তবে তাতে অতিরিক্ত আর একটি উপকরণ পড়বে। পেঁয়াজ কুচি। কড়াইয়ে নাড়তে নাড়তে মেথিশাক মণ্ড হয়ে যাবে। হলুদ ও চিনি পড়বে না।
তবে ভেটকির স্টু-র মতো লেয়ারে বা স্তরে একটা নিরামিষ পার্সি পদও রাঁধতে, খেতে ও খাওয়াতে ভালোবাসতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। এই রান্নায় সবার আগে বেরেস্তা তৈরি করে ও মটরশুঁটি সেদ্ধ করে রেখে দিতে হবে। কড়াইয়ে কুকিং মিডিয়াম হিসেবে পড়বে উৎকৃষ্ট মানের ঘি, তাতে পাঁচফোড়ন ও কাঁচালঙ্কা। প্রথম লেয়ারে পেঁয়াজ কুচি, তার উপর কুচি কুচি করে কাটা পালং শাক, তার উপর কুচোনো রাঙা আলু আর সবার উপরে বেগুন। রান্না হয়ে যাওয়ার পর কড়াইশুঁটি সেদ্ধ আর বেরেস্তা ছড়িয়ে নামাতে হবে। তবে এই রান্না যখন হবে, তখন কড়াই এত টুকু নাড়ানো যাবে না। আন্দাজ করে পালং শাকের লেয়ার সাজানোর সময়েই নুন দিতে হবে। এ বড় কঠিন রান্না। মুন্সিয়ানা তো বটেই, একেবারে প্রিসিশানে পৌঁছতে না-পারলে এই রান্না সম্ভব নয়।
তবে এই কিংবদন্তি শিল্পীই তো ‘আর ডেকো না সেই মধু নামে’ গানে ‘যদি গো মাধবী চাঁদ, ওঠে কোনও রাতে, খুঁজো না আমায়’ গাওয়ার সময়ে ‘খুঁজো না’ উচ্চারণ করেন একেবারে হৃদয় থেকে এবং বিস্ময়কর দক্ষতায় মিশিয়ে দিতে পারেন বিরহের দীর্ঘশ্বাস। সেটাও তো প্রিসিশান। এক শিল্পে প্রিসিশান হলে অন্য শিল্পে হতে পারবে না, এমন কি কোনও নিয়ম আছে?
আসলে কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মানের এক জন রন্ধনশিল্পীও।
Outstanding
Darun
খুবই মনোগ্রাহী।
গান পাগল মানুষ আমি । গান শুনছি সেই ৫০ এর দশক থেকে । গান শুনি তাই আয়ু না কমে বেড়ে চলেছে । ভালোবাসি শিল্পীগনকে । ভালোবাসি তাঁদের জীবনের নানা কথা/তথ্য জানতে । এটা আমার অভ্যাস । সখ ও বটে । লিখনিতে সমৃদ্ধ হলাম । কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি "মান্দাস" এর প্রতি ।
এমন একজন মানুষের গভীর সান্নিধ্য পেতে গেলে সাত জন্মের তপস্যা লাগে। মধুরিমা ম্যাডাম সেই তপস্যায় সিদ্ধি লাভ করেছেন এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অতো কাছের ও প্রিয় হতে পেরেছেন। শুধু যদি গানের কথা বলি, এতো বড়ো শিল্পী আগে কখনও আসেনি, পরেও জন্মাবে না। এমন একজন ক্ষণজন্মা গায়িকার খুব কাছে থাকার সুবাদে মধুরিমা ম্যাডাম নিজেকে ক্রমান্বয়ে পরিণত করেছেন এবং মহান শিল্পীর সৃষ্টির ধারাকে বহমান করে রেখেছেন। সে কারণে তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। মহাকাল ইতিহাসকে গ্রাস করে। কিন্তু, সময় তাকে সযত্নে লালন করে যায়। আজ থেকে একশো বছর পর কেউ যদি শোনেন "ও ঝরাপাতা, এখনই তুমি যেওনা যেওনা ঝরে, বোলোনা বিদায় অমন করে", তা'হলে তিনি কি ঝরাপাতার দীর্ঘশ্বাসের সাথে এই গানটির শিল্পীর কথা জানতে চাইবেন না ? এ প্রশ্নটা আমার রয়ে গেল, উত্তরটা বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।