শুধু কি নিজেকে লিখি! অক্ষরে জড়িয়ে থাকে, কচি নাড়ি, মা গন্ধ, জঠরের দাগ। সহস্র জনু ধরে হেঁটে যাওয়া, রক্ত মাংস রেণু রেণু, ভাষার মিশেল।
বছর দুয়েক আগে একটি ওয়েব কথোপকথনে আমার শব্দের ব্যবহার সম্বন্ধে বলেছিলাম, আমার লেখায় কথা বলেন অক্ষর পরিচয়হীন, অসম্ভব কন্যাসন্তান বিদ্বেষী আমার পিতামহী, প্রি-প্রাইমারীতে বৃত্তি পেয়েও বিয়ে হয়ে পড়াশুনো বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাপুস কেঁদে ভাসানো আমার দশ বছুরে মাতামহী। কথা বলেন, পাট পচা পুকুরে নাক অবধি ডুবিয়ে দাঙ্গার দিন পার করা কিশোরী মা আমার...
যাঁর লেখার মুখভাষ্যে সেই নিজেকে পেলাম, জ্যান্ত ও সজাগ, তাঁর বই...
"অনেক কষ্টে লিখি। লিখলে আমার প্রপিতামহ কৃষিকাজ থামিয়ে আমাকে দেখেন।
অনেক কষ্টে লিখি। লিখলে আমার প্রমাতামহী জঙ্গল থেকে কাঠ কুড়িয়ে আনতে গিয়ে সাপের ছোবলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগে আমার দিকে ফিরে তাকান।
লিখলে, আমার মাতামহ মাইলের পর মাইল পথচলা থামিয়ে আমায় দেখে নিয়ে তবেই বর্ডার পার করেন। অনেক কষ্টে লিখি।
আমার মাতামহী চটজলদি সোনার বালা, সোনার দুল স্তনের নিচে লুকিয়ে ফেলে কোলের ছা নিয়ে ঘর সংসার ছেড়ে যাওয়ার আগে একবার দেখে যান আমি কী কী-ই না লিখলাম।
আমার নিরক্ষর পিতামহী ছোটো ছোটো পায়ে বিক্রমপুরের এঁদো পুকুরপাড়ে রাজহাঁসের পিছু ধাওয়া করতে করতে থমকে গিয়ে দেখে নেন লেখা কতদূর হল।"
অলোকপর্ণা -র 'যাহা বলিব সত্য বলিব'
গল্প সংকলন, মান্দাস প্রকাশন