অতিরিক্ত খেয়ে, বেশি অম্ল-ঝাল আত্মসাৎ করে শরীরটাকে বোঝা বানানোর পক্ষপাতী নন সাধুগুরুরা। তাঁরা বলেন, ‘মনের ভারে হাঁটতে থাকো, অনেকটা পথ চলতে পারবে তোমরা’। সাধুর হেঁসেলে মা-গুরুরা খুব যৎসামান্য জিনিষপত্র দিয়ে আহারে এমন সব বাহার তৈরি করতে পারেন যে, সেসব স্বাদ জিভ থেকে সহজে ওঠে না। পুরনো তেঁতুল, ঘি, শাকপাতা, টাটকা সব্জি এঁরা রান্না করেন কাঠের জ্বালে, শিলে বাটা মশলায়, দেশীয় ঘানিতে ভাঙানো সর্ষের তেলে। এতে রান্নার স্বাদ আরও খোলতাই হয়ে ওঠে। পুজো পার্বণে দেবতার ভোগ হয় ঋতুকালীন দ্রব্যাদিতে। আমের মোরব্বা, তেঁতুলের সরবত, দুধমানের পাতা বাটা, শুক্তো, ঘন্ট রান্না হয় মহাপ্রভুর ভোগে। বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর বাড়িতে হয় বেগুন পাতুরি, ছানার রসা, ধোকার ডালনা, রসগোল্লার চাটনি। সাধুরা খাবার খান না, সেবা নেন প্রকৃতিজাত বস্তু ও প্রাণময়তা থেকে। এতে দীর্ঘ আয়ু ও লাবণ্যময় দেহের অধিকারী হন তাঁরা। সাধু বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাকৃতিক খাদ্যের ভেতর রয়েছে গুণাগুন। আরোপিত এমন খাদ্যখাবার খেলে শরীরে জরা নামে, শুক্রকণা তরল হয়। শুক্রকণা ঠিক না থাকলে মানসিক অস্থিরতা থাকে। অস্থিরতা, উদ্বিগ্নতা, তাড়াহুড়ো, চঞ্চলতা এসব শরীরে থাকলে সাধনা হবে না। সঠিক খাদ্যখাবার শরীরকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।’ এ বইতে ধরা রয়েছে চর্যাপদ থেকে শুরু করে মঙ্গলকাব্য হয়ে চৈতন্যযুগ পেরিয়ে হাল আমলেরও সাধুসন্ত, যোগিপুরুষদের খাবার দাবার, রান্নার প্রণালী, পথ্যাপথ্য, ওষুধি নিয়ে আবহমান বাংলার লৌকিক পরম্পরা বাহিত এক অভিনব আখ্যান। সাধক, সাধনসঙ্গিনীদের সঙ্গে একত্র আখড়াবাসের কথিকা।
Reviews
There are no reviews yet.